এফ কমার্স কি?
এফ কমার্সের সহজ সংজ্ঞা বলতে গেলে ফেসবুক প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে অনলাইনভিত্তিক যেসব ব্যবসা গড়ে উঠেছে সেগুলোই এফ-কমার্স। অর্থাৎ, এফ-কমার্স হলো ফেসবুক ভিত্তিক ব্যাবসার একটি মডেল যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট তৈরি না করেই সরাসরি ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের সাহায্য ব্যবসা পরিচালিত হয়। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই এফ-কমার্স প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশ সহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।দিন দিন এফ কমার্সের জনপ্রিয়তা আরো বারতেছে। বাংলাদেশে এখন ফেসবুক ব্যাবহারকারির সংখা ৫ কোটি ২৭ লাখের ও বেশি।
ই কমার্স ও এফ কমার্সের মধ্যে পার্থক্য
ই কমার্স ও এফ কমার্সের ব্যাবসার কিছু পার্থক্য রয়েছে।নিম্নে আলোচনা করা হল।
ই-কমার্সঃ-
১।ইলেকট্রনিক মাধ্যম বা অনলাইন ভিত্তিক যেকোনো ব্যবসায় ই-কমার্সের আওতায় পড়ে।
২।ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেনাবেচা হয়।
৩।বড় প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপের মাধ্যমে বিশাল পরিসরে পরিচালিত হয়।
৪।নানা ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন পন্য বেচা কেনা হয়।
৫।কেনা বেচার হিসাব নিকাশ সয়ংক্রিয় ভাবে হয়ে থাকে
৬।বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজস্ব পরিবহন থাকে
৭।নিজেদের পেমেন্ট গেটওয়ে থাকে
এফ কমার্সঃ-
১।।শুধু মাত্র ফেসবুক পেজের মাধ্যমে যে ব্যাবসা পরিচালনা করা হয় তাকে এফ কমার্স বলে।
২।ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বেচা-কেনা হয়।
৩।সাধারনত ব্যাক্তি বা ছোট কোম্পানি এটি ব্যাবহার করে।
৪।অল্প কয়েকটি ক্যাটাগরির পন্য বেচা-কেনা হয়।
৫।বেচা-কেনার হিসাব নিকাশ সয়ংক্রিয় ভাবে রাখার কোন সুযোগ নেই।
৬।নিজস্ব পরিবহন থাকে না ,পরিবহনের জন্য কুরিয়ার সার্ভিস ব্যাবহার করতে হয়।
৭।নিজেদের পেমেন্ট গেটওয়ে থাকে না, পাবলিক পেমেন্ট মেথোড ব্যাবহার করতে হয়।
এক নজরে বাংলাদেশের এফ-কমার্স নিয়ে কিছু তথ্য
বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বর্তমানে ৫.২৭ কোটি যা এফ-কমার্সের জন্য বিশাল এক ভোক্তা গোষ্ঠী।
* এফ কমার্স খাতের জন্য একটা বিশাল ইতি বাচক দিক হল এদেশের বেশির ভাগ তরুন ও তরুনি হল ফেসবুকের ইউসার এবং তারা এ ভোক্তা গোষ্ঠী।
* বেশিরভাগ লেনদেন হয়ে থাকে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস সেবার মাধ্যমে যেমন বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
* বাংলাদেশে এফ-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে ঐতিহ্যবাহী দেশীয় পণ্য এবং ফ্যাশন পণ্যের কেনাকাটা-ই বেশি।
* এফ কমার্সে পেইড বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি গ্রুপ ব্যাবহার করে কেনাবেচাও অনেক বেশি পপুলার ।
* বাংলাদেশের এফ-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে নারীদের ভুমিকা ও প্রভাব সব থেকে বেশি রয়েছে যা নিয়ে কিছু তথ্য নিচে উপস্থাপিত হলোঃ
* বাংলাদেশের এফ-কমার্স ভিত্তিক ব্যবসাগুলোর প্রায় ৭০% নারীরা পরিচালনা করেন।
* প্রায় ৪০% উদ্যোক্তা এফ কমার্স ভিত্তিক ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ গুলো নারীদের দ্বারা তৈরি ও পরিচালিত হয়।
* এশিয়া রেজিওন অঞ্চলে এফ-কমার্সের অর্ধেকই নারীরা পরিচালনা করেন।
বিঃদ্রঃ তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে বাংলাদেশি বিভিন্ন এফ-কমার্স সংগঠনের রিপোর্ট, দৈনিক পত্রিকার প্রবন্ধ এবং মেটা এর পরিসংখ্যান থেকে।
বাংলাদেশে এফ কমার্সের বাজার কতটা সম্ভবনাময়
ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ। বেশিরভাগই তরুণ যারা এফ কমার্স ব্যাবহার করে ধীরে ধীরে অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত হচ্ছেন। এছাড়াও দেশে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস চালু হওয়ায় আর্থিক লেনদেনও আগের চেয়ে অনেক সহজে করা যায়।এসব দিকগুলো বিবেচনা করলে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশের এফ-কমার্স খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। আপনি অফিসে বসে অথবা ঘরে বসে আপনার প্রয়োজনীয় পন্য অর্ডার করতে পারতেছেন এবং ঘরে বসেই তা ঘরে ডেলিভারি পেয়ে যাচ্ছেন।
এফ কমার্স প্রতিষ্ঠা করার জন্য কি কোন লাইসেন্স প্রয়োজন?
হ্যা, আপনি যদি বৈধ ভাবে ব্যাবসা করতে চান তা হলে আপনাকে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে হবে।সকল ব্যাবসা বাংলাদেশে বৈধভাবে করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হয়। কিন্তু যেহেতু এফ কমার্স হল ই কমার্সেরই একটা পার্ট তাই যখন লাইসেন্স করবেন তখন ক্যাটাগরিতে আইটি বা সফটওয়্যার ক্যাটাগরিটি ব্যাবহার করবেন।ট্রেড লাইসেন্স ব্যাবহার করলে আপনার লাভ ছাড়া কোন ক্ষতি নেই।আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্ট করতে চান তাহলে আপনার এই ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।ব্যাংক লোন নিতে চাইলে ও লাগবে । দোকান নিতে চাইলে ও লাগবে।
বাংলাদেশে এফ কমার্স জনপ্রিয়তার কিছু কারন
* স্বল্প পুজি বা পুজি ছাড়া ব্যাবসা শুরু করা যায়।
* ওয়েবসাইট তৈরি করা বা ওয়েবসাইট পরিচালনা করার কোন ঝামেলা ছাড়া ব্যাবসা করা যায়।
* বেচা-কেনা করার জন্য আলাদা ভাবে বাজার সৃষ্টি করার প্রয়োজন হয় না।
* দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে তৈরি ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পন্যের চাহিদা অনেক বেশি।
* অনেক বেশি মেম্বার আসে এমন গ্রুপে বিনামুল্যে পোস্ট করা যায়।
* অল্প খরচে পেইড এ্যাড দেয়ার সুবিধা।
* গতানুগতিক ব্যাবসার মত কাগজ পত্রের এতো ঝামেলা নাই।
এফ কমার্স নির্ভর ব্যাবসায়িদের চ্যালেঞ্জ গুলা কি কি?
বাংলাদেশের এফ কমার্স নির্ভর ব্যাবসায়িদের যে চ্যালেঞ্জ গুলার সম্মুখিন হতে হয় নিম্নে তা নিয়ে আলোচনা করা হলঃ-
১। মনিটরিং এর অভাবঃ-সঠিক মনিটরিং এর অভাবের জন্য আমাদের দেশের এফ কমার্সের অনেক ক্রেতা জালিয়াতির শিকার হন। এতে করে ক্রেতারা ধীরে ধীরে আস্থা হারিয়ে ফেলতেছেন এই এফ কমার্সের উপর থেকে।বর্তমানে আইসিটি ও শিল্প মন্ত্রনালয় কিছু প্রদক্ষেপ হাতে নিছে এই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে।
২।পরিবহন ব্যাবস্থাঃ-নিজস্ব পরিবহন না থাকায় পন্য ডেলিভারি দেয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ।নির্ভরযোগ্য কোন পরিবহন না থাকায় এফ কমার্সের উদেক্তারা কুরিয়ার সার্ভিসের উপর নির্ভরশীল।
৩।পরিকল্পনার অভাবঃ দেশের এফ-কমার্স খাতে সঠিক ব্যবসায় মডেলের প্রয়োগ এবং যথাযথ পরিকল্পনার ঘাটতি আছে। তাই এফ-কমার্স উদ্যোক্তারা নিজেদের মত করেই তা পরিচালনা করছেন যা ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
৪।বাংলাদেশের এফ কমার্সের জন্য নির্দিস্ট কোন পেমেন্ট গেটওয়ে নাই, এবং এফ কমার্সের ক্রেতা বিক্রেতারা মোবাইল ব্যাংকিং যেমনঃ বিকাশ, নগদ, রকেট এসব ব্যাবহার করে থাকেন এবং এই মাধ্যম গুলার লেনদেনের চার্জ অনেক বেশি এই ক্ষুদ্র ব্যাবসায়িদের লভ্যাংশে নেতিবাচক প্রভাক ফেলে।
৫।মার্কেটিং মেডিয়াঃ-ফেসবুক পেইড মার্কেটিং এর জন্য আন্তর্জাতিক যেসকল পেমেন্ট গেটওয়ে দরকার তার বেশির ভাগই এফ কমার্স ব্যাবসায়িকদের আওতার বাহিরে।যার কারনে পন্যের ও সেবার প্রচার ও প্রশার করতে প্রবলেম হইতেছে।