ফেসবুক মার্কেটিং এর গুপ্তরহস্য- ফেইসবুক নামটি এমন একটি নাম যে, পৃথিবীতে শোনেনি এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনি এখানে মার্কেটিং করবে নাহ তো কোথায় করবেন !!
কিন্তু আমরা ফেইসবুকে মার্কেটিং করতে এসে সবাই জানি নাহ যে, আমরা ঠিক কি করব আর কি করবো নাহ।
আপনি কি জানেন, প্রতিদিন ফেইসবুকে প্রায় ৪.৭৫ বিলিয়ন কন্টেন্ট শেয়ার হয় ?
কি ভাবছেন…!! একটু বেশি হয়ে গেছে…!! নাহ এটা সত্যি, প্রতিদিন এত সংখ্যক কন্টেন্টই ফেইসবুকে শেয়ার হচ্ছে।
কিন্তু এত কন্টেন্টে বা ব্লোগের ভিরে আপনার কন্টেন্টি ফেইসবুক আপনাদের মাঝে কিভাবে পৌছে দেয় এটা কি আপনি জানেন?
না জানাটাই স্বাভাবিক, বেশিভাগ ফেইসবুক মার্কেটারদের জন্য উপরোক্ত প্রশ্নটি অজানা।
এই ব্লোগটি পুরোপুরি পড়লে আপনি জানতে পারবেন যে, ফেইসবুক আসলে এই কাজ গুলো কিভাবে করে এবং আপনি জানতে পারবেন যে ফেসবুক মার্কেটিং এ আপনার ঠিক কি করনিয় এবং কি করনিয় না।
তাহলে আর আপনার সময় নস্ট না করে এবার মূল আলোচোনায় আসা যাক: ফেসবুক মার্কেটিং এর গুপ্তরহস্য
ফেইসবুকে আমরা অনেক ধরনের পোস্টই প্রোমোশন করে থাকি। সেই ক্ষেত্রে দেখা যার যে, তার ভিতর কিছু পোস্ট আছে যাতে ভাল রিসপন্স পাওয়া যায়। আর কিছু পোস্টে রিসপন্স আসে নাহ।
এতে করে দেখা যায় যে, আমাদের ফেইসবুক প্রোমোশনের ক্ষেত্রে প্রচুর টাকা খরচ করে ফেলি।
আপনি কি জানেন এটা কেন হয়…?
তাহলে আসুন জানি কিভাবে ফেইসবুক কাজ করে।
ফেইসবুক এখানে একটি এলগরিদম ব্যবহার করে, ২০১১ সাল পর্যন্ত এইডজ_ র্যাংক এলগরিদম ব্যবহার করত ফেইসবুক। Edge Rank আসলে তিনটি বিষয়ের উপর কাজ করতো। এগুলো হচ্ছে অ্যাফিনিটি, ওয়েট এবং টাইম ডিকে।
অ্যাফিনিটি:
ফেইসবুকের পোস্টের এঙ্গেইজমেন্টের পুরো ব্যপারটা Affinity নির্নয় করত । আপনার পোস্টে কতোটুকু এঙ্গেইজমেন্টের পরিমান, এঙ্গেইজমেন্টে এর ভিত্তিতে কতো লাইক, শেয়ার কমেন্ট করেছে কিনা সেটা ভিত্তি করে আপনার পোস্ট কতজনের নিউজফিডে শো হবে সেটা ফেইসবুক নিয়ন্ত্রন করতো।
ওয়েট:
আপনি কি টাইপের বা কি ধরনের পোস্ট করছেন অথবা শেয়ার করছেন সেটা এটার মাধ্যমে ফেইসবুক নিয়ন্ত্রন করে। ফেইসবুক ভিডিও, ছবি ও কন্টেন্টকে আলাদা আলাদা ভাবে ট্রিট করে। এর মাধ্যমেই আপনার পোস্টকে মিল রেখে নিউজফিডে আপনার পোস্ট আসে এবং এভাবে অন্যের কাছে পৌছে যায়।
টাইম ডিকে:
ফেইসবুকে আপনার পোস্টটি কতো পুরোনো সেটা এর মাধ্যমে নির্নয় করা হয়। পোস্ট যতো পুরানো হবে, রিচ ততো কম হবে।
তবে এঙ্গেইজ পেলে রিচ বাড়বে।
২০১৩ সালে এসে EdgeRank ফেইসবুক বন্ধ করে দেয় এবং Mechine Learing এলগরিদম ব্যবহার করা শুরু করে।
ম্যাসিন লার্নিং:
ম্যাসিন লার্নিং এমন একটি সফটওয়ার যে অপরেটরের ধরন বুঝে নিজে নিজে কাজ শিখে। এবং অপরেটর কে গাইড করা বা সাজেস্ট করাই মূলত ম্যাসিন লার্নিং এর কাজ।
আপনি যত সফটওয়ার কে ব্যবহার করবেন ততোই সফটওয়ার আপনার কাছ থেকে শিখবে।
তাই এই এলগরিদম থেকে ভাল ফলাফল পেতে হলে আপনাকে সফটওয়ারের একটিভ ইউজার হয়ে উঠতে হবে।
এই এলগরিদমের মাধ্যমে ফেইসবুক ৪টি বিষয়ের উপর আপনার প্রতিটি পোস্টে রেঙ্কিং করে।
এই ৪টি বিষয় হচ্ছেঃ ফেসবুক মার্কেটিং এর গুপ্তরহস্য
ইনভেন্টরি, সিগনাল, প্রেডিকষন , স্কোর
ইনভেন্টরি: আপনার নিউজফিডে দখার মতো কতোগুলো পোস্ট আছে সেটা এটি দেখায়।
সিগ্নাল: কি ধরনের পোস্ট, পোস্টটি কে করেছে ,কতো বয়স সেটা নিয়ন্ত্রন করে।
প্রেডিকশন: পোস্টে কতোজন রিয়েকশন করতে পারে, কি ধরনের রিঅ্যাকশন, কতোজন করতে পারে, কতোজন পজিটভ বা নেগেটিভ রিয়েকশন করতে পারে অথবা করেছে সেটি নিয়ন্ত্রন করাই এটির কাজ।
স্কোর: ফেইসবুকে জুকারবার্গ যেটি বলেছন এই মডেল নিয়ে যে, “অর্থবহ প্রতিক্রিয়াগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ”।
এখানে অর্থবহ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কি ধরনের পোস্টগুলো পছন্দ করছে এবং সেটি বোঝা যাবে যখন কেউ লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট করবে।
এই মডেলের সব চেয়ে মজার ব্যপার যেটা হচ্ছে দেখবেন যে, ফেইসবুকে কেউ সুখবর জাতীয় খবর যেমন সেটা হতে পারে কারোর জন্মদিন অথবা চাকরি অথবা বিয়ের খবর, এই পোস্ট গুলো দেখতে কারোর মিস হয় না।
এর কারন হচ্ছে ফেসবুক ধরনের পোস্ট গুলোকে হাই র্যাংকিং করে রাখে। যার কারনে সব ফ্রেন্ডের নিউজফিডে চলে যায়।
এই ৪টি বিষয়ের ভিতর মার্কেটাররা শুধু সিগ্নাল কে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে। ফেসবুক মার্কেটিং এর গুপ্তরহস্য
সিগ্নাল কে আবার ২টি বিষয়ে ভাগ করা হয়েছে – ফেসবুক মার্কেটিং এর গুপ্তরহস্য
- একটিভ সিগ্নাল
- প্যাসিভ সিগ্নাল
প্যাসিভ সিগ্নাল এ আমরা যা দেখতে পারি পোস্টিং টাইম, পোস্টের ধরণ, পোস্টের ভিউ (Post View) ইত্যাদি ।
একটিভ সিগ্নাল হলো লাইক, কমেন্ট, শেয়ার বা অন্যান্য active events যা পোস্টের পজিটিভ/নেগেটিভ এনগেজমেন্ট নির্দেশ করে।
ফেসবুকের গুপ্তরহস্যতো গেলো যাক তাহলে এবারের পর্ব হচ্ছে মার্কেটিং করতে এসে কি করবেন আর কি করবেন নাহঃ
-
ফেইসবুকে লিংক শেয়ার করা মানেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং না।
- শুধু মাত্র প্রোডাক্ট বেচাকেনার কথা না বলে ফেসবুক পোস্টের কনটেন্ট এমন ভাবে লিখুন যেন অডিয়েন্স নিজ থেকে লাইক শেয়ার বা কমেন্ট করতে উৎসাহিত হয়। এই ক্ষেত্রে আপনি অডিয়েন্সকে প্রশ্ন করতে পারেন। অডিয়েন্সদের প্রশ্ন করলে তারা উত্তর দিতে চাইবে।আপনি পুল খুলেও দিতে পারেন।
- ফেইসবুক মার্কেটিং এ অনেক কাজ আছে যেই কাজ গুলি করা নিষেধ ঐ কাজ গুলি থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ধরুন এমন কোন পোস্ট যদি আপনি বুস্ট করতে চান যেটির অর্গানিক পারফমেন্স ভালো না তবে সেটি হতে রেজাল্ট পেতে আপনার বুস্টিং বাজেট বেশি করতে হবে। কিন্তু যদি অর্গানিক পারফমেন্স ভালো এমন পোস্টের জন্য ডলার খরচ করে বুস্ট করেন তবে আপনি সেখান থেকে বেস্ট রেজাল্ট পাবেন। এটিকে আমরা CPC দিয়ে পরিমাপ করি।
- আপনি কন্টেন্ট লেখার সময় কিছু ট্রিক্স ব্যবহার করতে পারেন। লেখার সময় কিছু লিঙ্ক দিয়ে দিতে পারেন । কিন্তু আপনি বলে দিবেন নাহ যে, এই লিঙ্কে ক্লিক করো। এমন ভাবে লিঙ্কের লেখাটা হবে যেন সে নিজে থেকেই সেখানে ক্লিক করে।
যেমনঃ ১০টি দারুণ ফেসবুক মার্কেটিং টুলস্ (ব্যবহার করুন ফ্রিতে) !!
উপরোক্ত নিয়মাবলি মেনে চললেই আপনি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ একজন সফল মার্কেটার হতে পারেন।